আপনি কি জানেন, প্রতিদিনের মাথাব্যথা উপশমের জন্য আপনি যে ওষুধগুলি গ্রহণ করেন, তা নিজেই আপনার মাথাব্যথার কারণ হতে পারে? আপনি কি সেই ওষুধের কারণে আরও বেশি ব্যথা অনুভব করছেন যা আপনাকে ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে নেওয়া হয়? মাথাব্যথার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে "মেডিকেশন ওভারইউজ হেডেক" (MOH) বা ওষুধ-অতিব্যবহারের মাথাব্যথা নামক একটি অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। এই ধরনের মাথাব্যথা মূলত ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহৃত ওষুধের কারণে প্ররোচিত হয়।
আজ আমরা, MOH সম্পর্কে আলোচনা করব, এর লক্ষণ, কারণ, এবং উপলব্ধ চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে।
MOH এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
MOH-এর সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি, তবে একাধিক গবেষণা কিছু সম্ভাব্য তত্ত্ব প্রস্তাব করেছে। একটি প্রধান তত্ত্ব অনুসারে, ঘন ঘন মাথাব্যথার ওষুধ গ্রহণ মস্তিষ্কের ব্যথা নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এটি মস্তিষ্কের ট্রাইজেমিনাল স্নায়ুর অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার দিকে পরিচালিত করে। সহজভাবে বলতে গেলে, ওষুধের বারবার ব্যবহার মস্তিষ্কে এমন পরিবর্তন ঘটায় যা এটিকে ব্যথার সংকেতের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে, ফলে মাথাব্যথা আরও ঘন ঘন ও তীব্র হয়।
পশুর ওপর গবেষণায় দেখা গেছে যে নির্দিষ্ট ওষুধ, যেমন মরফিন বা ট্রিপটানসের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার, মস্তিষ্কে ব্যথা সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে এবং মাইগ্রেনের ট্রিগারগুলোর প্রতি মস্তিষ্ককে আরও প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে।
কিছু ক্ষেত্রে, জেনেটিক ফ্যাক্টরও MOH-এর প্রবণতা বাড়াতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা দীর্ঘ সময় ধরে ব্যথানাশক ওষুধ অতিরিক্ত ব্যবহার করেছেন, তাদের মস্তিষ্কের কিছু অঞ্চলের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। তবে MOH-এর জটিল কারণগুলো বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।
MOH নির্ণয়ের জন্য আন্তর্জাতিক মাথাব্যথা শ্রেণীবিভাগ (ICHD-3) মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়:
MOH এমন একটি অবস্থা যেখানে ঘন ঘন ব্যথানাশক ব্যবহার মাথাব্যথার তীব্রতা এবং ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ায়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ওষুধ ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা, প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা, এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এই অবস্থার উন্নতি সম্ভব। ঘন ঘন মাথাব্যথার ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণের জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখবেন, ওষুধের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেই এর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব এড়ানো সম্ভব।
ধরে নিন যে একটি ঘরে আগুন লেগেছে। তখন সাধারণ প্রতিক্রিয়া হলো, জল দিয়ে সেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করা। এবার আগুন নিভে গেল। কিন্তু আবারও আগুন লাগল এবং আপনি জল দিয়ে নেভালেন। এভাবে বারবার আগুন লাগতে থাকলে, আর আপনি বারবার জল দিয়ে নেভাতে থাকলে, একদিন আপনার মনে হবে—বারবার জল ব্যবহার করার ফলেও তো ক্ষতি হচ্ছে? এবং এটাও মনে হবে, কেন বারবার আগুন লাগছে? জল দিয়ে নেভানো কি একমাত্র সমাধান? আগুনটা লাগার আগেই আটকানো কি সম্ভব নয়
মাইগ্রেনের অ্যাটাকও একপ্রকার আগুনের মতো। আর তাৎক্ষণিক ব্যথা উপশমের ওষুধ হলো জলের মতো। তাই বারবার ওই তাৎক্ষণিক ব্যথা উপশমের ওষুধ খেলে, একসময় এই ধরনের ওষুধই মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। তাই যা করতে হবে, তা হলো আগুন লাগা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ, আগুন যেন না লাগে তার জন্য ফায়ার সেফটির ব্যবস্থা করা। আর সেটাই হলো মাইগ্রেনের প্রতিরোধমূলক (prophylactic) ওষুধ, যা নিয়মিত সেবন করতে হয় এবং পাশাপাশি জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হয়, যেন মাইগ্রেনের অ্যাটাক না হয়।